অর্থনীতির সমসাময়িক অবস্থা বিবেচনা নিয়ে সরকার আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়নে কাজ করছে। বিশ্ববাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দেওয়ায় রাজস্ব আয় কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার তার ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি অর্থবছরের চেয়ে জিডিপির ২ শতাংশ কমিয়ে বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হবে। চলতি অর্থ বছরের বাজেটের আকার ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে জিডিপির ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জিডিপির অংশ হিসেবে বাজেটের আকার ২ শতাংশ কমিয়ে আনা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারিত রয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বাজেটের আকার কমলেও আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার মত। বাজেট ঘাটতি হচ্ছে জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ।

সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশ।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ’ কমিটির সভায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকারটি তুলে ধরেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। জুম প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এই সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান, বাণিজ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, সম্পদ কমিটি সভায় আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের একটি সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মোট রাজস্ব আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১১ দশমিক ৩ শতাংশ।

জিডিপির অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরের চেয়ে এবার রাজস্ব আদায়ের হার কমানো হয়েছে প্রায় ২ শতাংশ। জিডিপির তুলনায় কমলেও চলতি অর্থবছরের চেয়ে তা ১১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

নতুন বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫.৫৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। সে হিসাবে ঘাটতি কমছে। কিন্তু জিডিপির তুলনায় ঘাটতি কমলেও টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাড়ছে ৩০ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব আয় বাড়ছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’ (এনবিআর)-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ৮.৪শতাংশ)।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআর-এর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ৯.৫ শতাংশ)। সে হিসাবে এনবিআর-এর লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। শতকরা হিসাবে বাড়ছে ১২ শতাংশ।

এছাড়া আগামী বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং কর-বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ দুই খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে যথাক্রমে ১৬ হাজার কোটি টাকা ও ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে যথাক্রমে ১৩ শতাংশ ও ৫ শতাংশ।

সূত্র জানায়, অন্যান্য অর্থবছরের মত বাজেটের আকার বাড়লেও উন্নয়ন ব্যয় খুব বেশি বাড়ছে না। নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এডিপির আকার হচ্ছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।